ঢাকা , বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ঢাকায় বড় শোডাউনের প্রস্তুতি : বিএনপিকে ফের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় জামায়াত

আপলোড সময় : ১০-১০-২০২৪ ১২:২৫:৩২ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-১০-২০২৪ ০৩:২২:২৯ অপরাহ্ন
​ঢাকায় বড় শোডাউনের প্রস্তুতি : বিএনপিকে ফের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চায় জামায়াত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর প্রথমবারের মতো দলীয় ব্যানারে ঢাকায় বড় জমায়েত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয় জনসভার মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জানান দিতে চায় দলটি। এই জনসভায় সারাদেশ থেকে অন্তত ১০ লাখ লোক জমায়েতের পরিকল্পনা করছে জামায়াত। 
সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক মাঠে নামছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারা এ সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এজন্য দলটির নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা এবং ওয়ার্ডে টার্গেটভিত্তিক ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নিজেদের দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সমাবেশে উপস্থিত করাতে কাজ করছেন তারা। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই  সমাবেশের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে দলটি। এই মহাসমাবেশের মাধ্যমে আবারও বিএনপিকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির নেতারা বলছেন, এই সমাবেশে ঢাকা মহানগর এলাকার থেকে তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যোগ দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এজন্য ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জনসংযোগও চালাচ্ছেন।  ঐতিহাসিক এই সমাবেশের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী তুলে ধরতে চায় যে দল হিসেবে তারা এখন অনেক শক্তিশালী ও জনপ্রিয় এবং তাদের নেতাকর্মীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় ও চাঙ্গা। 
দলটির নেতারা বলছেন, গত ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিকভাবে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে সেটি তুলে ধরা হবে এই সমাবেশে। পাশাপাশি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে দেশের ও মানুষের কল্যাণে কী কী করবে, তার একটি ইশতেহার দেওয়া হবে। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের কিছু চিত্র, রাষ্ট্র সংস্কার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে দেশবাসীকে একটা বার্তা দেবে দলটি। 
২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে জামায়াত ইসলামী রাজনৈতিকভাবে কার্যত কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবার পর কোন নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারেনি দলটি। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকার মগবাজারে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ ছিল। জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর অফিসগুলোও বন্ধ ছিল। ২০১৪ সালের পর থেকে রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রকাশ্যে তেমন কোন কর্মসূচিও ছিল না। যদিও বিভিন্ন সময় তারা ঝটিকা মিটিং-মিছিল করেছে কিংবা চেষ্টা করেছে। এমনকি ঘরোয়াভাবেও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মিটিং করতে গেলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েছে। সবশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলে সরকারের অনুমতি ছাড়ায় বিনাবাধায় বড় একটা সমাবেশ করেছে দলটি। আর এই সমাবেশ থেকেই দলীয় নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। যার ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দলটির ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। 
জামায়াতে ইসলামীর নেতারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে তৎপর হবার সময় এসেছে। এজন্য সমাবেশের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়টি আবারো সামনে আনতে চায় দলটি। জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকট, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি এবং নাজুক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। ফলে মাঠের রাজনীতিতে সরব হয়ে এসব দাবি জনসম্মখে তুলে ধরার এখনই সময়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন আসলে সব রাজনৈতিক দল সরব হতে চায়, জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ সমাবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্ধারিত দিন ছিল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ওইদিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করে। জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে মৃত মানুষের সাথে পৈশাচিক আচরণ করে। শাহাদাত বরণ করেন জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অসংখ্য ভাই। তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী আওয়ামী সন্ত্রাসে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়। নৈরাজ্য, লুটপাটে হাজার হাজার মানুষ ও পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৮ অক্টোবর থেকে আধিপত্যবাদী শক্তির সহযোগিতায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দেশের জনগণের উপর সওয়ার হওয়ার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণতন্ত্র ছিল অবরুদ্ধ, বাকরুদ্ধ ছিল মানুষ, গুম-খুন ও আয়নাঘর ছিল বিরোধীদল এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার। প্রতিহিংসার রাজনীতি ও বানোয়াট মামলা সাজিয়ে জুডিসিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করা হয় জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। চালু করা হয় ভোট ছাড়া নির্বাচন ও সরকার গঠনের বাকশালী সংস্কৃতি। ড. মাসুদ আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ও গণবিপ্লবে স্বৈরাচার ও জালিম সরকারের পলায়ন এবং আওয়ামী দু:শাসনের অবসানের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর আমাদের সামনে নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও বাকশালী চরিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরা এবং শাহাদাতের জযবা শাণিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।


বাংলা স্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/এএইচ/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ